আমাগো সুখ আর ঘরে আইলো না

Sep 6, 2024 - 23:57
Nov 18, 2024 - 22:30
 0
আমাগো সুখ আর ঘরে আইলো না
ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মাদারীপুরের আলী হাওলাদারের মৃত্যুতে তাঁর পরিবারে মাতম চলছে। বুধবার বিকেলে শিবচর উপজেলার ভান্ডারিকান্দি এলাকায়

ঈদের এক দিন আগেও স্বামী আলী হাওলাদারের (৩৫) সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন রোমেনা আক্তার। শেষ কথায় স্বামী জানান, ঈদের দিন তাঁদের গেম হবে (নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি) কিন্তু ইতালিতে পৌঁছানোর আগেই দেশটির দক্ষিণ উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকা ডুবে আলী হাওলাদারসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়।

গত সোমবার মারা যান মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার খানকান্দি এলাকার বাসিন্দা আলী হাওলাদার। মঙ্গলবার রাতে স্বামীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হন রোমেনা। এর পর থেকে তাঁর বাড়িতে মাতম চলছে।

রোমেনা বেগম বলেন, ‘আমাগো সুখ আর সুখ নেই। সব শ্যাষ হইয়া গেল। আমাগো ভালো রাখতে বিদাশে গিয়া সে আর ফিরা আইব না জানলে তাঁরে বিদাশ যাইতে দিতাম না। আমাগো সুখ আর ঘরে আইলো না।

 

পুলিশ স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলী হাওলাদার বাংলাদেশে থাকতে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের চালক ছিলেন। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে দুই মাস আগে ১৬ লাখ টাকা চুক্তিতে মাদারীপুরের স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে দুবাই হয়ে লিবিয়ায় যান। সোমবার লিবিয়ার উপকূল থেকে প্রায় ৭০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর সঙ্গে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেন। ভূমধ্যসাগর-সংলগ্ন ইতালির দক্ষিণ উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর তাঁদের নৌকাটি ডুবে যায়। এতে অন্তত ১১ অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা যান। নিখোঁজ হন শিশুসহ ৬০ জনের বেশি। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মাদারীপুরের শিবচরের আলী হাওলাদার, সাব্বির হোসেনসহ তিনজন আছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

আজ বুধবার বিকেলে শিবচরের ভান্ডারিকান্দি গ্রামে আলী হাওলাদারের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী স্বজনেরা আহাজারি করছেন। ছয় বছর বয়সী সন্তান রাব্বী এক বছরের রাবেয়া এখনো বুঝে উঠতে পারেনি, বাবা নেই। প্রতিবেশী অনেকেই তাঁদের বাড়িতে ভিড় করছেন। কেউ কেউ সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

রোমেনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বছরের এক ছেলে এক বছরের একটি মেয়ে। ওর বাবা ছাড়া আমি ওদের কীভাবে বড় করব? ওরা কাকে বাবা বলে ডাকবে? কে দেখবে ওদের?

নিহত ব্যক্তির মামাশ্বশুর আবদুস সালাম উকিল বলেন, সোমবার রাতে আলী মারা যান, মঙ্গলবার রাতে তাঁরা নিশ্চিত হন। আলীদের পরিবার দরিদ্র। তাঁর ভাগনির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ে হয়। ইজিবাইক চালিয়ে আলী সংসার চালাতেন। বেশ ভালোই ছিল। একটু বেশি ভালো থাকার জন্য বিদেশে যেতে চান। শ্বশুরবাড়ি থেকেই টাকাপয়সা দিয়ে দালালের মাধ্যমে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। লিবিয়া থেকে ইতালিতে যাওয়ার পথে সাগরে ডুবে মারা গেলেন।

নিহত ব্যক্তির বাবা ইউনুস হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে আর নাই। ছেলের মুখ আর দেখতে পাইলাম না। বিদেশে যাইয়া অনেক টাকা কামাই করবেএই আশায় মরণপথে গেল! আমি রাজি ছিলাম না।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ইতালিতে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে মারা যাওয়ার খবর তাঁরা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি। যদি নিহত ব্যক্তির পরিবার তাঁদের কাছে সহযোগিতা চান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশ ফেরত আনাসহ সার্বিকভাবে সহায়তা করা হবে।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মাদারীপুরের তিনজন যুবক মারা গেছেন বলে শুনেছি। তবে আমরা এখনো কোনো কিছুই নিশ্চিত নই। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বা রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা কোনো তালিকা পাইনি। এরপরও বিষয়টি নিয়ে আমরা খোঁজখবর নেব। অভিযুক্ত দালালদের বিষয়েও খবর নেওয়া হচ্ছে। নিহতের পরিবারকে আইনগত সব ধরনের সহযোগিতা পুলিশের পক্ষ থেকে করা হবে।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 1
Love Love 1
Funny Funny 0
Angry Angry 1
Sad Sad 0
Wow Wow 0