আমার একমাত্র পোলারে ক্যান মরতে হইল?

Nov 18, 2024 - 22:17
Nov 18, 2024 - 22:28
 0  24
আমার একমাত্র পোলারে ক্যান মরতে হইল?
একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে মা নাছিমা বেগমের আর্তনাদ যেন থামছেই না। গতকাল বুধবার বিকেলে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার হাওলাদারকান্দি গ্রামে

প্রায় আট বছর আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কাঁধে আঘাত পান শাহ আলম হাওলাদার। এর পর থেকে ভারী কোনো কাজ করতে পারছেন না। এক মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে আর্থিক টানাপোড়েনের সংসারে হাল ধরতে বাধ্য হন স্ত্রী নাছিমা বেগম। সেলাইয়ের কাজ করে কোনোমতো চলত সংসার। এ অবস্থা দেখে মায়ের সঙ্গে হাল ধরেন তাঁদের একমাত্র সন্তান হৃদয় আহমেদ (শিহাব)। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় রাজধানী ঢাকার বাড্ডা এলাকায় একটি ফার্নিচারের দোকানে তাকে কাজে পাঠানো হয়েছিল। দুপুরের খাবার খেয়ে ওই দোকানে যাওয়ার পথে গত শুক্রবার এলাকাটিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়।

শিহাবের এমন মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তার মা–বাবা। গত শুক্রবার রাতে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সন্যাসীর চর ইউনিয়নের রাজারচর আজগর হাওলাদারকান্দি গ্রামে তার মরদেহ পৌঁছায়। পরে গত শনিবার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও শিহাবের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় ফুপাতো ভাই মনির মোল্লার হাসান ‘স্টিল অ্যান্ড ফার্নিচার’ নামের দোকানে প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করত শিহাব (১৭)। সেখান থেকে যা আয় হতো, এর মধ্যে নিজের জন্য খরচের টাকা রেখে বাকিটা পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দিত সে।

গতকাল বুধবার শিহাবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্তান হারানোর শোকে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে ঘরের এক কোণে বসে আছেন তার বাবা শাহ আলম হাওলাদার। সন্তানের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা নাছিমা বেগম। একমাত্র ভাইকে হারিয়ে আর্তনাদ করে কাঁদছে বোন। পরিবারটির এমন অবস্থা দেখে শোকাচ্ছন্ন স্বজন-প্রতিবেশীরাও। বাড়ির পাশের কবরস্থানে এসে ভিড় করছেন তাঁরা। একমাত্র নাতিকে হারিয়ে থেকে থেকে প্রলাপ বকছেন দাদা রফিক হাওলাদার।

 ঘটনার প্রসঙ্গে শিহাবের ফুপাতো ভাই মনির মোল্লা বলেন, ‘শিহাব আমার দোকানে কাজ করত। ওই দিন শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে আমার বোনের বাসায় দুপুরের খাবার খেতে যায় সে। খেয়ে লিংক রোডে কারখানায় ফেরার সময় সে গুলিবিদ্ধ হয়। বুকের এক পাশ থেকে গুলি ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসা পায়নি। ভর্তি করতে চায়নি কোনো হাসপাতাল! পরে বনশ্রী এলাকার নাগরিক স্পেশালাইজড প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে শিহাবকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তার। চোখের সামনে ভাইডা মরে গেল, কিচ্ছু করতে পারলাম না।

শিহাবকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর চাচা সাহাবুদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘আমার বড় ভাইয়ের পরিবারে একমাত্র ছেলেসন্তান ছিল শিহাব। ওর মৃত্যুতে পুরো পরিবার আমরা শোকাহত। কোনো কিছু বলার ভাষা নাই।

শিহাবের মা নাছিমা বেগম আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার পোলাডা তো কোনো আন্দোলন করে নাই; ওরে কেন গুলি কইরা মারল? আমার একমাত্র পোলারে ক্যান মরতে হইল? আমি এখন কি নিয়া বাঁচমু? আমার পোলার কাছে তোমরা আমারে নিয়া যাও।

শিহাবের মৃত্যুর বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘আমি খোঁজখবর নিয়েছি। সবকিছু স্বাভাবিক হলে ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। তা ছাড়া তারা চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে যেকোনো সহযোগিতা করা হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow